পঞ্চখণ্ড আই প্রতিবেদক : বর্তমানে যেসব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এডহক কমিটি গঠিত হয়েছে বা হবে, সেখানে নিয়মিত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান এডহক কমিটিই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কলেজসমূহে গঠিত বা প্রস্তাবিত এডহক কমিটিসমূহের অনুমোদনের পর তাদের দ্বারা নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডি গঠনের কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
রবিবার (২৭ এপ্রিল ২০২৫) শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
হঠাৎ করে এ ধরনের স্থগিতাদেশ জারির ফলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, শিক্ষক এবং এডহক কমিটির সভাপতিদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, কোন পূর্বঘোষণা ছাড়াই কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। অনেকেই বিষয়টি জানতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন।
Π কারণ অনুসন্ধান:
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সরাসরি কেউ মন্তব্য করতে সম্মত হননি। তবে কয়েকজন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডির প্রবিধানমালা, ২০২৪ জারি করা হয়, যেখানে নিয়মিত কমিটির সভাপতির জন্য এইচএসসি বা সমমান শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে জারি করা পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে, প্রবিধি ৬৪ অনুসারে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়, যেখানে স্কুলের জন্য সভাপতির যোগ্যতা স্নাতক এবং কলেজের জন্য স্নাতকোত্তর নির্ধারণ করা হয়।
বর্তমানে নিয়মিত কমিটির সভাপতির যোগ্যতা সংশোধনের কাজ চলমান রয়েছে। এ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত নতুন নিয়মিত কমিটি গঠন করলে আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতার আশঙ্কা রয়েছে।
Π স্থগিতাদেশের পেছনের আরেকটি কারণ:
বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা নিয়মিত কমিটির হাতে রয়েছে। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী:
প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং সহকারী প্রধান নিয়োগ করবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
কর্মচারী নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হবে জেলা প্রশাসক (ডিসি) বা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়কে।
যতদিন না সংশোধিত প্রবিধানমালা কার্যকর হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব নয়। এজন্যই আপাতত নিয়মিত কমিটি গঠনের কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।
Π ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন,
আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে সংশোধিত প্রবিধানমালার খসড়া প্রস্তুত হওয়ার কথা রয়েছে। এক মাসের মধ্যে নিয়মিত কমিটি গঠনের নির্বাচন সংক্রান্ত নতুন আদেশ জারি করা হতে পারে।
নতুন নিয়মিত কমিটির কাঠামোয় কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি নিয়মিত কমিটিতে যুক্ত করার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
Π বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এডহক কমিটির কার্যক্রম সংক্রান্ত নির্দেশনা:
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের (নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর) গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি সম্পর্কিত ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবিধানমালা, ২০২৪’-এর প্রবিধি ৬৪ অনুযায়ী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব সাইয়েদ এ. জেড. মোরশেদ আলী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক জানানো হয়েছে যে:
যেসব প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে বা গঠিত হবে, পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত উক্ত এডহক কমিটি কর্তৃক নিয়মিত কমিটি গঠনের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এ নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তারিখ ২১/১১/২০২৪ তারিখের স্মারক নং ৩৭.০০.০০০০.০৭২.১৮.০০৩.২৪.২৫৩ মোতাবেক জারি করা হয়েছে।
প্রবিধানমালা, ২০২৪-এর প্রবিধি ৬৪ অনুযায়ী এডহক কমিটি সংক্রান্ত মূল বিধানসমূহ হলো:
১. কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডি/ম্যানেজিং কমিটি সময়মতো গঠিত না হলে বা বাতিল হলে বা বিদ্যমান কমিটি ভেঙে গেলে, অনধিক ৬ (ছয়) মাসের জন্য ৪ (চার) সদস্যবিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠিত হবে, যার সদস্যরা হবেন:
*সভাপতি: শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি।
*শিক্ষক প্রতিনিধি: জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মনোনীত প্রতিষ্ঠানভুক্ত একজন শিক্ষক।
*অভিভাবক প্রতিনিধি: জেলা সদরের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক মনোনীত একজন অভিভাবক।
*সদস্য-সচিব: প্রতিষ্ঠান প্রধান (পদাধিকারবলে)।
২. এডহক কমিটি গঠনের জন্য শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি নিতে হবে এবং অনুমতি প্রাপ্তির এক মাসের মধ্যে কমিটি গঠনের আবেদন করতে হবে।
৩. সভাপতির মনোনয়নের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধান স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনজন প্রার্থীর তালিকা শিক্ষা বোর্ডে প্রেরণ করবেন।
৪. শিক্ষা বোর্ড উক্ত তিনজনের মধ্য থেকে অথবা অন্য কাউকে সভাপতিরূপে মনোনীত করতে পারবে এবং কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
৫. এডহক কমিটির মেয়াদ অনুমোদনের তারিখ থেকে ৬ (ছয়) মাস।
৬. নির্ধারিত সময়ে নিয়মিত কমিটি গঠন না হলে সর্বোচ্চ আরও একবার এডহক কমিটি গঠন করা যাবে (মোট দুইবারের বেশি নয়)।
৭. যৌক্তিক কারণ ছাড়া কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে সভাপতি ও সদস্যরা (প্রধান শিক্ষক ব্যতীত) পরবর্তী ২ (দুই) বছর কোনো কমিটির পদের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
৮. কোনো ব্যক্তি পরপর দুইবারের বেশি এডহক কমিটির সভাপতি, শিক্ষক প্রতিনিধি বা অভিভাবক প্রতিনিধি হতে পারবেন না।
৯. এডহক কমিটির কোনো সদস্যের মৃত্যু বা পদত্যাগের ক্ষেত্রে ৭ (সাত) দিনের মধ্যে শিক্ষা বোর্ডে অবহিত করে অন্তর্বর্তীকালীন সদস্য মনোনয়নের প্রস্তাব পাঠাতে হবে।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক: মো: আতাউর রহমান
আইন-উপদেষ্টা: ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
বানিজ্যিক কার্যালয়: সমবায় মার্কেট, কলেজ রোড,
বিয়ানীবাজার পৌরসভা, সিলেট থেকে প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত।
ই-মেইল: 𝐩𝐚𝐧𝐜𝐡𝐚𝐤𝐡𝐚𝐧𝐝𝐚𝐞𝐲𝐞@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦 মোবাইল নম্বর: ০১৭৯২৫৯৮১২৯