পঞ্চখণ্ড আই ডেস্ক : সিলেটে গেল ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ও প্রখর রৌদ্র থাকায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নদীর পানি নামতে শুরু করেছে সিলেট নগরী, সিলেট সদর, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল থেকে। পানি কমায় আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজ ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা। তবে সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান সার্বিক পরিস্থিতির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন বলে জানিয়েছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ডসহ বন্যা কবলিত ৮টি উপজেলার মোট ৭৬১টি গ্রাম ইতোমধ্যে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় বন্যা আক্রান্ত জনসংখ্যা ৬ লাখ ৮ হাজার ৩৩৫ জন। যা গতকাল শনিবার পর্যন্ত ছিলো ৬ লাখ ৯হাজার ৩৩ জনে।
রোববার (০২ জুন) সিলেটের জেলা প্রশাসন জানায়, বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড, সিলেট সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন, জৈন্তাপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন, গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন, কানাইঘাট উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন, জকিগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন, বিয়ানীবাজার উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার ২টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, এসব এলাকাগুলোতে ৫৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রে রোববার পর্যন্ত ১হাজার ৮শ ৬ জন মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন, তবে গতকাল তার সংখ্যা ৩হাজার ৩শ ৪২ জনে। পানিবন্দি পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়ন ভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সরকারি- বেসরকারিভাবে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় গত ১২ ঘন্টায় আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ২০৪ জন তাদের বাড়ি ফিরে গেছেন। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং সার্বিক পরিস্থিতির উপর সর্তক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
এদিকে গেল ২৪ ঘন্টায় সিলেটের জাফলং এলাকায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যার পরিমাণ ছিল ১১৩ মিলিমিটার। তাছাড়া অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের মাত্রা কম ছিলো বলে জানিয়েছে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী শামীম বলেন, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় নদীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত পানি কমতে শুরু করেছে। পরবর্তীতে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে বরাদ্দ দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
তিনি আরও জানান, এখানে মোট ৬৭ টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রস্তুত আছে। ১ টি আশ্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে ৪ টি পরিবার ও ১২ জন লোক আছে। বাকিরা নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেছেন। এ পর্যন্ত মোট ১৪ মে.টন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আগামীকাল আরো বরাদ্দ প্রদান করা হবে। বন্যার্থদের সহায়তার জন্য ১৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটা ইউনিয়নে দু’টি করে নৌকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সার্বক্ষণিক ১টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে; যেখানে প্রয়োজনে ০২৯৯৬৬৪৬৩৮২ ও ০১৭৭০৫২৯৪৮৬ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরীন বলেন, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৮টি ইউনিয়নই প্লাবিত হয়েছে। মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রেই রয়েছেন। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি কমছে। উপজেলা সদর থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে আরও দু’একদিন লাগতে পারে বলে জানান তিনি।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফসানা তাসলিম জানান, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়ন ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। কুশিয়ারার অমলসীদ পয়েন্টে কাল থেকে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি ধীর গতিতে কমছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগবে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানান, সিলেটেও শুক্রবার ও শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। আবহাওয়া উন্নতির দিকে, এতে বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে বলে জানান তিনি। তিনি শনিবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ৭.৩ মিলি মিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানান।